হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতির অন্যতম, ক্ষুদ্রতম মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের সঙ্গে, ওষুধ বস্তুর ক্ষীণায়ন ও শক্তিকরণের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই শক্তিকরণ (Potentization) প্রক্রিয়া হ্যানিম্যানের নিজস্ব আবিষ্কার, যা দুটি পদ্ধতিতে যথাশততমিক ও পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয়। তন্মধ্যে পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতির ওষুধ প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার বিধি সম্বন্ধে হ্যানিম্যান অর্গানন ষষ্ঠ সংস্করণে নির্দেশনা দিয়ে যান। কিন্তু এটি হ্যানিম্যানের মৃত্যুর পরও বহু বছর অপ্রকাশিত থাকায় হ্যানিম্যানোত্তর হোমিওপ্যাথগণ প্রচলিত শততমিক পদ্ধতির শক্তিক্রম নিয়েই গবেষণা ও প্রয়োগ পরীক্ষা করেন। ওষুধের শক্তিক্রমকে তাঁরা উচ্চ থেকে উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করেন। ব্যবহারিক প্রয়োগেও এসব উচ্চ শক্তিক্রম রোগারোগ্যে অধিকতর কার্যকর প্রতিপন্ন হয়। তবে সমস্যা দেখা দেয়, ওষুধ বস্তুকে এত উচ্চশক্তিতে উন্নীত করার উপায় নিয়ে। হ্যানিম্যান নির্দেশিত পদ্ধতিতে, কায়িক শ্রমে হাত দিয়ে ৩০, ২০০ বা বড়জোর ১০০০ শক্তিক্রম পর্যন্ত প্রস্তুত করা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে ৫০ হাজার (৫০ এম), এক লক্ষ (সিএম), দশ লক্ষ (এমএম) বা তদূর্ধ শক্তিক্রম প্রস্তুত করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই অল্প সময় ও শ্রমে, অধিক পরিমাণে উচ্চশক্তির ওষুধ তৈরীর উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা চলে।

উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী কিছু হোমিওবিজ্ঞানী এ সময় উচ্চশক্তির ওষুধ তৈরীতে যান্ত্রিক কৌশল প্রয়োগের চিন্তা করেন। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় অচিরেই যান্ত্রিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কয়েকটি শক্তিকরণ যন্ত্র (Potentizer Machine) উদ্ভাবিত হয়। এসব যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চশক্তির ওষুধ তৈরী শুরু হলে এর উদ্ভাবকরা প্রথমে নিজেদের মধ্যে এসব ওষুধের ব্যবহার সীমিত রাখেন। কিন্তু এগুলোর কার্যকারিতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য হোমিওপ্যাথগণও তা ব্যবহার করতে শুরু করেন। এভাবে ক্রমশ এর ব্যবহার হোমিওসমাজে ছড়িয়ে পড়ে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও তখন বাণিজ্যিকভাবে এসব ওষুধ প্রস্তুত ও সরবরাহের কাজে এগিয়ে আসে। বিশ্বখ্যাত বোরিক এন্ড ট্যাফেল কোম্পানীও ডাঃ স্কিনারের তৈরী শক্তিকরণ যন্ত্র দিয়ে উচ্চশক্তির ওষুধ প্রস্তুত করে।

উচ্চশক্তির এসব গবেষক ও উদ্ভাবকের মধ্যে যাঁরা উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ডাঃ ক্যারল ডানহাম (Carroll Dunham), ফ্রান্সিস এডমন্ড বোরিক (Francis Edmund Boericke), বার্নহার্ট ফিঙ্কি (Bernhardt Fincke), টমাস স্কিনার (Thomas Skinner), স্যামুয়েল সোয়ান (Samuel Swan), হেনরী সি অ্যালেন (Henry C. Allen), এস পি বার্ডিক (S.P. Burdick) ও জেম্‌স টাইলার কেন্ট (James Tyler Kent)ছিলেন শীর্ষস্থানীয়।